মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। ১৯০০সালের কথা। একটি পুরো ট্রেনের ছবি তুলতে গিয়ে নির্মাণ করতে হয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যামেরা। এ বছরের সেপ্টেম্বরে অনিকা বারগেস নামের একজন, দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ক্যামেরা নির্মাণের মজার সে কাহিনী লিখেছেন। ১৮৯৯ সালের ঘটনা। “দি সিকাগো” ও “অলটন রেলওয়ে কোম্পানী” সর্বপ্রথম দুনিয়ার মানুষের সামনে হাজির করেন “দি অলটন লিমিটেড”কে। যারা নির্মাণ করেছিলেন- বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ট্রেন বা রেলগাড়ী। এ ট্রেনটি নির্মাণ করা হয়েছিল সিকাগো ও সেন্ট লুইস-এর মাঝে রেল যোগাযোগ সেবা বিক্রির উদ্দেশ্যে। রেলগাড়ীটির দেখার মত বিষয় ছিল গাড়ীর ৬টি ডাব্বাই ভেতর ও বাইরের দিক থেকে একই নমুনার। তাদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ছিল একই এবং প্রতিটি জানালা ছিল দেখার মত।
“দি রেলওয়ে ম্যাগাজিন”এর ১৯০১ সালের এক সংখ্যায় লিখেছিল- ট্রেনটি এমনই যে ওটি দেখতে বাহিরের দিক থেকে যেমন ঠিক তেমনি ভেতরের দিকও। কিন্তু কোম্পানীর মানুষদের কাছে একটি বিষয় সমস্যা হয়ে দেখা দিল। তারা ভাবতে থাকলেন কি করে রেলগাড়ীটির ভেতর-বাহিরের সৌন্দর্য্য সার্বিকভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরেন।
ওই চিন্তা থেকেই ডাক পড়লো সে সময়ের খ্যাতিমান ছবি তোলার শিল্পী ‘ফটোগ্রাফার’ জর্জ. আর. লরেন্স-এর।
“সিকাগো ও অলটন” কোম্পানী লরেন্সকে ডেকে তাদের উদ্দেশ্যের কথা জানালেন। ছবি তোলার কাজে লরেন্স ছিলেন সে সময়কার সিকাগো শহরের কিংবদন্তীর নায়ক। তার সিকাগো ষ্টুডিও মানুষের কাছে তখন পরিচিত হয়ে উঠেছে-“ছবি তোলায় অসম্ভব বলে কিছুই নেই আর এটিই আমাদের বৈশিষ্ট্য” এ পদবাচ্যে। তখন থেকেই তিনি তার ফ্লাশ ফটোগ্রাফি পরীক্ষন চর্চ্চার জন্য খ্যাতিমান হয়ে উঠেছেন।
“সিকাগো ও অলটন” জানতে চাইলেন লরেন্স কি অলটন লিঃ-এর একটি ৮ফুট লম্বা ছবি তুলতে পারবেন।
৩২ বছর বয়সী লরেন্স, কোন খ্যাতিসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবা নামকরা কোন কারিগরী নিকেতনের পাশকরা ছাত্র ছিলেন না। তিনি তখন সবেমাত্র দেশীয় স্কুলের শিক্ষা উত্তীর্ণ এক কারখানা কর্মী। মাত্র ২০ বছর বয়সে লরেন্স সিকাগো শহরে আসেন রেলওয়ে ওয়াগন কারখানার কর্মী হিসেবে। তার শিল্পমান সম্মত সৃষ্টিশীল দক্ষতা তাকে ছবি তোলা বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলে। সে সময়ের সিকাগো শহরের এক ব্যবসায়িক চিত্রগ্রাহকের কাছ থেকে ছোট্ট একখানা ষ্টুডিও কামড়া ভাড়া করেন।
জানা যায় ১৮৯৩সালে ওই ব্যবসায়িক চিত্র গ্রাহক হঠাৎ করেই ব্যবসা ছেড়ে শহর পরিত্যাগ করে চলে যান। ফলে সুযোগ আসে লরেন্সের। লরেন্স পুরো ষ্টুডিও-র মালিক হয়ে যান। সিকাগো শহরে আসার ১০ বছরের মাথায় লরেন্স নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন খ্যাতীমান চিত্র গ্রাহক ও ‘প্লেটমেকার’ হিসেবে।
লরেন্স, ‘সিকাগো ও অলটন লিঃ’ এর প্রকল্প হাতে নেন। মাসখানেকের গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জর্জ. আর. লরেন্স সৃষ্টি করলেন ৯০০পাউণ্ড ওজনের বিশালাকৃতির লেন্স। যা বহন করে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যেতে প্রয়োজন হয়ছিল ১৫জন কর্মীর। খরচ পড়েছিল সেই সময়ে ৫হাজার ডলার। সেই সময়ে ওই অর্থ দিয়ে সিকাগোতে একখানা বাড়ী কেনা যেতো।
নির্মাণ শেষে পাশে এসে দাড়ালেন লরেন্স। সারি বেঁধে দাঁড়ালেন ক্যামেরা হাতে সে সময়ের কতিপয় নামকরা সাংবাদিক, ছবি তোলার জন্য।
এভাবেই নির্মিত হয়েছিল বিশ্বের সেরা ক্যামেরা এবং ছবি তোলা হয়েছিল পুরো ট্রেনের। তখনকার দিনের আমেরিকার বিশেষ করে সিকাগো শহরের বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়েছিল সে সংবাদ। যার কিছু সংখ্যা লরেন্সের কাছে সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু কালের করাল গ্রাসে সে পত্রিকা এখনও আছে তবে ছবির অনেক কিছুই বিনষ্ট হয়ে গেছে যত্নের অভাবে। নির্মিত ক্যামেরার ষ্টুডিও ছবি অনেকটা অক্ষত আছে। ক্যামেরার ভগ্নাংশ রক্ষিত আছে সিকাগো শহরে।